হাইকোর্ট নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুন মামলার রায়ে কাউন্সিলর নুর হোসেন এবং সাবেক র্যাব অধিনায়ক তারেক সাঈদসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রেখেছে।
এর আগে এই সাত খুন মামলা ২৬ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল নারায়ণগঞ্জের একটি আদালত।
এদের মধ্যে ১৫জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে বাকি ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে হাইকোর্ট।
এছাড়া নয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের রায় হাইকোর্টেও বহাল রয়েছে।
আলোচিত এই মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে আছেন র্যাবের একজন সাবেক অধিনায়ক তারেক সাঈদ এবং স্থানীয় একজন কাউন্সিলর নুর হোসেন। তারেক সাঈদ বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের একজন মন্ত্রীর জামাতাও।
বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এই রায় ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ”ডেথ রেফারেন্স শুনানির পর আদালত এই আদেশ দিয়েছেন। ঘটনার পরে আর্মড ফোর্সেসের লোক, নেভির লোক, এয়ার ফোর্সের লোক ছিল, পুলিশের সদস্যরা ছিল, কিন্তু তারপরেও অতি সংক্ষিপ্ততম সময়ে তাদের বিচার হলো এবং শাস্তি হলো। এতে প্রমাণ হলো, আইনের উর্ধ্বে কেউ না, তা সে যতই শক্তিশালী হোক বা যে বাহিনীর অন্তর্ভূক্ত হোন না কেন।”
আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, র্যাব একটি এলিট ফোর্স এবং মানুষের নিরাপত্তায় তারা যে কাজ করে তা প্রশংসনীয়। কিন্তু কতিপয় সদস্য যে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত হয়েছে, এর দ্বারা বাহিনীর সার্বিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার কারণ নেই।
দণ্ডিতদের মধ্যে ২৫ জনই র্যাবের সদস্য যারা সশস্ত্র বাহিনী বা পুলিশ থেকে সংস্থাটিতে প্রেষণে এসেছিলেন, যাদের মধ্যে রয়েছে লেফটেন্যান্ট কর্নেল এবং মেজর বা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার পদমর্যাদার কর্মকর্তাও। অভিযোগ ওঠার পর তাদের চাকরীচ্যুত করা হয়। কোন ফৌজদারি অপরাধে র্যাবের একসঙ্গে এত সদস্যের সাজা এর আগে আর হয়নি।
দণ্ডপ্রাপ্ত একজন আসামী সাবেক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আরিফ হোসেনের আইনজীবী এস এম শাহজাহান বলেছেন, ”সংবিধান অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের সাজাপ্রাপ্তদের আপীলের অধিকার আছে। পুরো রায়টা পাওয়ার পর আমরা পর্যালোচনা করে দেখবো, সেখানে কি বলা হয়েছে। এরপর আমি যার জন্য কাজ করেছি, তিনি যদি সম্মত হন বা পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বলেন, তখন আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।”
গত ২৬শে জুলাই এই মামলার আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায়ের জন্য ১৩ই আগস্ট দিন ধার্য করে।
কিন্তু আদালত পরে রায় ঘোষণার দিন পিছিয়ে ২২শে আগস্ট রায়ের দিন ধার্য করেন।
রায়ের পর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, ”যে যেমন অপরাধ করেছে, সেই অপরাধ অনুযায়ী যার যার সাজা হয়েছে। অনেক বিপদ মোকাবেলা করতে হয়েছে। তারপর যে রায় পেয়েছি, আমি তাতে সন্তুষ্ট।’
আরেকজন নিহত তাজুল ইসলামের পিতা আবুল খায়ের বলছেন, ”আজ যে রায় পেয়েছি, তাতে আমরা সন্তুষ্ট। এখন সরকারের কাছে আবেদন এটাই যে, এই রায়টা যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়।”
হত্যাকাণ্ডের প্রায় তিন বছর পর জানুয়ারি মাসে রায় হয় চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী এই মামলার।
২০১৪ সালের এপ্রিলের ওই ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের একজন কাউন্সিলর এবং একজন আইনজীবীসহ সাতজনকে হত্যা করা হয়।
যাদের সাজা কমানো হয়েছে, তাদের মধ্যে নয়জন নুর হোসেনের সহযোগী যাদের কেউ কেউ পলাতক বা ভারতের কারাগারে রয়েছে। আর দুইজন রয়েছে বাহিনীর সাধারণ সদস্য।
২০১৪ সালের এপ্রিলের ২৭ তারিখ আদালত থেকে ফেরার পথে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৫ জন এবং তার আইনজীবী চন্দন সরকার ও মি. সরকারের ড্রাইভারকে অপহরণ করা হয়।
এর তিনদিন পর শীতলক্ষা নদী থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
সূত্র, বিবিসি